প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সুবিধা অনেক। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য একটি নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি। এটি আলাদা আইনি সত্তা হিসেবে কাজ করে, যেখানে শেয়ারহোল্ডারদের দায় সীমিত থাকে। কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত রাখে এবং শেয়ার হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এটি কর সুবিধা, আর্থিক সুরক্ষা, এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি কমিয়ে ব্যবসার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য আদর্শ একটি কাঠামো প্রদান করে। নিচে এই কোম্পানি এন্টিটির সুবিধাগুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করা যায়
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। কারণ এখানে শেয়ারহোল্ডারের একটি লিমিটেশন রয়েছে। অর্থাৎ এখানে সর্বনিম্ন ১ জন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডার থাকতে পারে। শেয়ার হস্তান্তর করতে হলে অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি প্রয়োজন পরে এবং কিছু রুলস অ্যাপ্লাই হয়। যে কারণে মালিকানা নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। অন্যদিকে বোর্ড অব ডিরেক্টর কোম্পানি পরিচালনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
যেহেতু কোম্পানিতে শেয়ার হস্তান্তর আইন এবং শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতির মাধ্যমে হয় সেহেতু নতুন করে বা অযাচিত কোন ব্যক্তি মালিকানা পায় না। এতে কোম্পানির এথিক্স ঠিক থাকে। যা দেশি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে।
![প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি](https://onedbc.com/wp-content/uploads/2025/01/Benefits-of-Private-Limited-Company-2.webp)
বিজনেসে গোপনীয়তা বজায় থাকে
বিজনেসে গোপনীয়তা অনেক জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে সকল আর্থিক হিসেব সহ পরিচালনার বিষয়গুলো জনগণের সামনে প্রকার করতে হয়। কিন্তু প্রাইভেট কোম্পানিতে এটি বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ আপনাকে আপনার বিজনেসের কোন ডিটেইলস অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে হবে না। এমনকি দেশের সরকার পর্যন্ত আপনাকে বাধ্য করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশ কম্পনাই আইন অনুযায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গুলো এই স্বতন্ত্রতা অর্জন করেছে।
সহজ শেয়ার হস্তান্তর সুবিধা
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে শেয়ার বিক্রি করার অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে লিগ্যাল ওয়েতে শেয়ার হস্তান্তর করতে গেলে অনেক সহজেই তা করা যায়। তবে শেয়ার হস্তান্তর করতে গেলে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে অনুমতি নিতে হয়। এই কারণে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার গুলো নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে থাকে। পাশাপাশি তদারকির মধ্যে থাকে দেখে ম্যানেজমেন্টের মধ্যে কোন অহেতুক লোক ঢুকতে পারে না। অর্থাৎ পুরো কম্পনাই শেয়ারহোল্ডার দের দ্বারা পরোক্ষভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ব্র্যান্ড পপুলারিটি বৃদ্ধি পায়
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি যথাযথ নিয়মের ভিত্তিতে তৈরি হয়ে থাকে। এর কার্যক্রম অনেক গোছানো ভাবে হয় জন্য ক্লাইন্টদের মনে আস্থা তৈরি করে। পাশাপাশি সরবরাহকারী ও বিনিয়োগকারীর মনে ব্র্যান্ড সম্পর্কে ট্রাস্ট তৈরি হয়। বড় বড় চুক্তি পেতে ব্রান্ড পপুলারিটি অনেক জরুরি। কিন্তু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি থেকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির প্রতি সবার ট্রাস্ট বেশি কাজ করে। কারণ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে অন্যান্য কোম্পানি থেকে বেশি স্টাবল মনে হয়। পাশাপাশি এখানে করা ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন পাওয়ার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়।
সহজেই নিবন্ধন করা যায়
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কম ঝামেলাপূর্ণ। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করতে যেখানে অনেক বেশি অর্থ প্রয়োজন পরে সেখানে কম খরচেই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করা যায়। অন্যদিকে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পাওয়ার জন্য যে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন রয়েছে তা তুলনামূলক সহজ। দ্রুত সময়ে অল্প পরিমাণ ডকুমেন্ট দিয়েই নিবন্ধন করা যায়।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি করার রেজিস্ট্রেশন ক্রয়ার জন্য যে নাম ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নেওয়া হয় তার মেয়াদ ৬ মাস পর্যন্ত থাকে। অর্থাৎ নাক ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর বাকি ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য ৬ মাসের মতো সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এই ধরনের কোম্পানি দেওয়ার জন্য সরকার থেকে অনেক কম নিয়ম সমৃদ্ধ ফর্ম দেওয়া হয়।
আইনি সুরক্ষা পাওয়া যায়
আইনি সুরক্ষা বলতে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি একটি স্বতন্ত্র আইনি সত্তা হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি সরকারের কাছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা চিহ্নিত নয়। বরন এটি নিজের নামে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। অন্যদিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা করতে পারে। আবার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তা প্রতিরোধ করতে পারে।
শেয়ারহোল্ডারদের পার্সোনাল কোন সমস্যা যেমন মামলা, ট্যাক্স, সম্পদের হিসেব কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত নয়। অর্থাৎ শেয়ার হোল্ডারের পার্সোনাল কোনো দেনা পাওনা কম্পানিরত উপরে বর্তায় না। পাশাপাশি কোম্পানির কোন দেনা পাওনা বা ঋণ শেয়ারহোল্ডার দের উপরে বর্তায় না। যে কারণে ইনভেস্টরদের প্রাইভেট কোম্পানির দিকে নজর বেশি থাকে।
ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিগুলো প্রফেশনাল বিজনেস অপরচুনিটি ডিসপ্লে করে। পাশাপাশি এই ধরনের কোম্পানির পেশাদারিত্ব বেশি থাকে। যা দেখে একজন ইনভেস্টর আকর্ষণ অনুভব করে থাকে। অন্যদিকে নতুন শেয়ার ইস্যু করে পার্টনার নেওয়া যায়। যা ইনভেস্টরদের সরাসরি কোম্পানির সাথে থেকে গ্রো করার সুযোগ তৈরি করে।
কোম্পানি পলিসি ও স্টেবিলিটির কারণে বড় বড় সরকারি এবং বেসরকারি ঋণ পেতে সুবিধা হয়। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিগুলো সব সম্য প্রফিটেবল বিজনেস রুল অনুসরণ করে থাকে। এতে ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার সুযোগ আরও অনেক বৃদ্ধি পায়। মোটকথা বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি অনেক এগিয়ে।
![ট্যাক্স বেনিফিট পাওয়া যায়](https://onedbc.com/wp-content/uploads/2025/01/Benefits-of-Private-Limited-Company-3.webp)
ট্যাক্স বেনিফিট পাওয়া যায়
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির উদ্যোক্তাগণ বিশেষ কোর সুবিধা পেয়ে থাকে। ব্যক্তিমালিকানা কোম্পানির থেকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য সরকার নির্ধারিত কর অনেক সময় কম হয়ে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের কর্পোরেট ট্যাক্স রেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির জন্য ৩০% এবং দেশী কোম্পানির জন্য ২২.৫%।
সরকারের নির্ধারিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কম্পনাই প্রতিষ্ঠিত হলে করের হার আরও কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে SEZ অঞ্চলে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকার প্রথম ১০ বছর কোর ছাড় দেয় এবং পরবর্তী ৫ বছরে করের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা হয়। পাশাপাশি কর্মচারীর বেতন, অভিস ভারা, মার্কেটিং খরচ সহ উন্নয়ন খরচ করের হিসেব থেকে বাদ দেওয়া হয়। ডাবল ট্যাক্স দেওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সীমিত দায়বদ্ধতা
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারদের দায়বদ্ধতা সীমিত আকারে থাকে। অর্থাৎ এখানে একজন শেয়ারহোল্ডার যে পরিমাণ শেয়ারের মালিক বা তার যতটুকু ইনভেস্টমেন্ট সে শুধু সেই অংশের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। কোনো কারণে যদি মূল কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায় বা ঋণে ডুবে পরে তাহলে তা শেয়ারহোল্ডারদের নিজস্ব সম্পদের উপরে বর্তাবে না। এতে উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি নিতে সুবিধা হয় যা বিজনেস গ্রো করার পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্ভাবনে সহায়তা করে থাকে।
শেষকথা
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি একটি আধুনিক ও নিরাপদ ব্যবসায়িক কাঠামো যা উদ্যোক্তাদের দায় সীমিত করার পাশাপাশি ব্যবসার কার্যক্রমে স্থায়িত্ব আনে। এটি স্বতন্ত্র আইনি সত্তা হিসেবে কাজ করে এবং শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করে। মালিকানা নিয়ন্ত্রণ এবং শেয়ার হস্তান্তরের সহজ নিয়ম ব্যবসার সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করে।
কর সুবিধা, স্থিতিশীলতা, এবং উত্তরাধিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি বড় এবং ছোট উভয় ব্যবসার জন্য একটি আদর্শ পছন্দ। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সুবিধা হচ্ছে এটি ব্যবসার ঝুঁকি কমিয়ে উন্নয়নের রাস্তা সহজ করে। এটি স্টার্ট-আপ ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়।