কোম্পানির চেয়ারম্যান হচ্ছে কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডার দের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তি। কোম্পানি পরিচালনা করার জন্য এই পদের গুরুত্ব অনেক। কারণ কোম্পানি পরিচালনা করার জন্য যে বোর্ড অব ডিরেক্টরস নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের প্রধান হচ্ছে চেয়ারম্যান। পরিচালনা কমিটি তার কাছে কাজের জবাবদিহিতা করে থাকে।
পাশাপাশি কোম্পানি CEO সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে তার কাজের রিপোর্ট করে থাকে। এই সকল কার্যক্রম বাদেও কোম্পানির চেয়ারম্যানের অনেক ধরনের কাজ থাকে। নিচে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কোম্পানির চেয়ারম্যান এর কাজ কি থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের নেতৃত্ব দেওয়া
চেয়ারম্যান হচ্ছে ম্যানেজমেন্টের প্রধান। তার যত গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে তার মধ্যে গভর্নেন্স বোর্ডের নেতৃত্ব দেওয়া অন্যতম। এখানে নিয়মিত মিটিং করার মাধ্যমে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সাথে প্রফেশনাল বিষয় নিয়ে ডিসকাস করা প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে কোম্পানি কোন স্ট্রাটেজিতে পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব থাকে চেয়ারম্যানের উপরে।
তাছাড়া কোম্পানির ভালোর জন্য যত ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে সব কিছুর দায়িত্ব থাকে চেয়ারম্যানের উপরে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্ট্রাটেজিক পরিকল্পনা, CEO বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া, কোম্পানি গ্রোথ বাড়াতে প্রয়োজনীয় অ্যাজেন্ডা নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া চেয়ারম্যান অন্যান্য বোর্ড মেম্বারদের আলাদা আলাদা মতবাদকে একত্র করে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
কোম্পানি পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ
কোম্পানি পরিচালনার কৌশলের উপরে এর সফলতা নির্ভর করে থাকে। একজন চেয়ারম্যান কোম্পানির অন্যান্য বোর্ড সদস্যদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করে থাকে। পাশাপাশি এই সকল কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে সে সম্পর্কে উদ্যোগ নিয়ে থাকেন।
সাধারণ চেয়ারম্যান পুরো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ওভারসি করে থাকেন। এতে কোথায় কি বিষয়ে ইম্প্রুভ করতে হবে তা নির্ধারণ করে থাকে। অন্যদিকে CEO সহ অন্যান্য কার্যকরী সদস্যদের সাথে মিলে চেয়ারম্যান কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করেন। পাশাপাশি আগামী ৫ বা ৮ বছর পর কোম্পানি কোন পজিশনে পৌঁছাবে তার রূপরেখা তৈরি করে থাকেন।
CEO এর কাজ দেখাশোনা করা
CEO বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাজ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা তদারকি করা। আপাত দৃষ্টিতে CEO কে কোম্পানির ফেস হিসেবে দেখানোর কারণে তাকেই মালিক মনে হয়। তবে একজন CEO এর কাজ তদারকি করার দায়িত্ব থাকে চেয়ারম্যানের কাছে।
চেয়ারম্যান CEO কে কাজ বণ্টন করে দেওয়ার পাশাপাশি তার সাথে শেয়ার হোল্ডারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান সুস্থভাবে পরিচালনার পাশাপাশি নতুন প্রোজেক্ট চালু করার বিষয়ে চেয়ারম্যান পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সর্বোপরি চেয়ারম্যান CEO এর কার্যক্রম তদারকি করার পাশাপাশি সঠিক দিক নির্দেশনার কাজ করে থাকে।
শেয়ারহোল্ডারদের সাথে কোম্পানির যোগাযোগ নিশ্চিত করা
প্রাইভেট বা পাবলিক সব ধরনের কর্পোরেট কোম্পানির প্রধান মালিকানা থাকে এর শেয়ার হোল্ডারদের হাতে। তবে তারা কখনোই কোম্পানি পরিচালনা বা এর তদারকির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে না। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য তারা বোর্ড অব ডিরেক্টর নিয়োগ দিয়ে থাকে। যাদের কাজ হচ্ছে কোম্পানি উন্নতির জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং নিতি-নির্ধারণ করা।
প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম, উন্নতি ও অবনতিসহ সকল ধরনের রিপোর্ট করা থেকে শুরু করে বাকি সকল জরুরি বিষয় শেয়ার হোল্ডারদের জানানোর কাজ করে থাকে চেয়ারম্যান। এই পদ সাধারণত সৃষ্টি করা হয়েছে কোম্পানির বাকি কার্যক্রম সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে শেয়ার হোল্ডারদের কাছে তার রিপোর্ট করার জন্য। অন্যদিকে একজন চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যায়। CEO এর সাথে পরামর্শ করে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে যা কোম্পানির উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
কর্পোরেট কালচার প্রতিষ্ঠা করা
কর্পোরেট কালচার কোম্পানির সফলতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একজন চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানের কালচার যেন ঠিক থাকে তা তদারকি করে থাকেন। তাছাড়া কোম্পানির আইনকানুন, বোর্ড মেম্বারদের মধ্যকার বিভিন্ন দণ্ড ইত্যাদি তদারকির পাশাপাশি বৈধ উপায়ে সমাধান করে থাকেন।
অন্যদিকে বোর্ডের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব চেয়ারম্যানের হাতে থাকে। কোম্পানি কোন ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত কিনা এবং অভ্যন্তরে কোন ধরনের নৈতিকতা বহির্ভূত কার্যক্রম চলছে কিনা তা নিয়ন্ত্রণ করার কাজ চেয়ারম্যানের হাতে থাকে। এগুলো বাদেও প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব চেয়ারম্যানের কাছে থাকে।
কোম্পানির পাবলিক ইমেজ মেইন্টেইন করা
সাধারণত কোম্পানির পাবলিক ইমেজ মেইন্টেইন করার কাজ করে থাকেন CEO কিন্তু তাকে এই কাজে সাহায্য করার কাজ পরোক্ষভাবে করে থাকে চেয়ারম্যান। তিনি কোম্পানির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে থাকেন।
এতে উক্ত কার্যক্রমগুলোতে কোম্পানির প্রোমোশন হওয়ার পাশাপাশি শেয়ার হোল্ডারদের কাছে গুড রেপুটেশন তৈরি হয়। তিনি বিভিন্ন কনফারেন্স, আলোচনা সভা, ইন্টারভিউ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পাবলিক ইমেজ উন্নত করতে সহায়তা করে থাকে।
কোম্পানির বিপদে ঢাল হিসেবে কাজ করা
সংকট ব্যবস্থাপনা একজন চেয়ারম্যানের কাজের যত গুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে তার মধ্যে অন্যতম। কারণ শেয়ার হোল্ডারদের পরে ক্ষমতার দিক দিয়ে চেয়ারম্যান থাকেন। কোম্পানির ভালো মন্দ সহ সকল বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যে কারণে কোন আইনি ঝামেলা বা বৈশ্বিক ঝামেলা মোকাবেলা করার জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হয়।
পাশাপাশি এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গাইডলাইন দেওয়া থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব তার উপর থাকে। চেয়ারম্যান কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি সীমিত করার কাজ করে থাকেন। অর্থাৎ সকল ধরনের বিপদের সময় চেয়ারম্যানকে ঢাল হিসেবে কাজ করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজনৈতিক ও সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা
এটি হচ্ছে ধরুন দেশে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে সেখানে ত্রাণ দিয়ে পাবলিকের মধ্যে কোম্পানি সম্পর্কে পজিটিভ ইমেজ তৈরি হয়। একজন চেয়ারম্যান প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা করে, নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি ও টেকসই উন্নয়নে সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে পজিটিভ প্রোফাইল তৈরি করে। যা বিজনেস গোল মিট করার সাথে সাথে কোম্পানির মিশন ও ভিশন পূরণে সহায়তা করে থাকে।
শেষকথা
রাজনৈতিক ও সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য অপরিহার্য। এটি শুধু ব্যবসার কার্যক্রম সহজতর করে না, বরং প্রতিষ্ঠানের সুনাম, গ্রহণযোগ্যতা এবং সম্প্রদায়ের আস্থা বৃদ্ধি করে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে পারে। এই লেখায় কোম্পানির চেয়ারম্যান এর কাজ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।