নতুন পণ্য উদ্ভাবন বিজনেস উন্নয়নের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিজনেস গ্রো করার জন্য সময়ের প্রয়োজনে প্রতিটি বিজনেসে নতুন প্রোডাক্ট উদ্ভাবন অথবা পূর্বের প্রোডাক্ট উন্নয়ন করতে হয়। না হলে প্রতিযোগিতায় কম্পিটিটর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাইহোক আমাদের আজকের লেখায় নতুন পণ্য উদ্ভাবনের ধাপগুলো কি কি সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আইডিয়া তৈরি
নতুন পণ্য তৈরি করার জন্য সবার প্রথমে কাজ করতে হবে আইডিয়া তৈরি করা নিয়ে। কারণ আপনার যদি কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা না থাকে তাহলে নতুন প্রোডাক্ট আনবেন কীভাবে? যাইহোক এই ক্ষেত্রে সাধারণত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হয়, যেমন-
- ব্রেইনস্টর্মিং
- মার্কেট রিসার্চ
- প্রোডাক্ট কোয়ালিটি রিসার্চ
- কাস্টমার সেগমেন্ট শর্টলিস্ট
সহ আরও অনেক বিষয় মাথায় রেখে আইডিয়া তৈরি করতে হয়। নতুন পণ্য মার্কেটের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কি না তা আইডিয়া তৈরির মাধ্যমে আগেই খুঁজে বের করা যায়। যাইহোক, প্রোডাক্ট আইডিয়া তৈরির জন্য প্রথমে মার্কেট রিসার্চ করে দেখতে হবে-
- কোন প্রোডাক্ট মার্কেটে নাই
- যদি থাকে তাহলে কোয়ালিটি কেমন
- নতুন প্রোডাক্ট কি উক্ত কোয়ালিটির থেকে ভালো বানানো সম্ভব
ইত্যাদি বিষয়ে নজর দিতে হয়। এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন আপনি যে প্রোডাক্ট ডেভেলপ করতে চাচ্ছেন তা আপনার বিজনেস নিসের সাথে সামঞ্জস্য থাকে। কারণ মোটর সাইকেল পার্টস বিক্রি করার দোকানে কেউ আপেল কিনতে যাবে না।
রিসার্চ
রিসার্চ হচ্ছে কোন বিষয় বা জিনিসকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে তথ্য সংগ্রহ করা। রিসার্চ করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে বিষদ তথ্য সংগ্রহ করা। নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করতে আইডিয়া জেনারেট করার সাথে সাথে রিসার্চ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিসার্চ করার সময় যে যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হয়-
- মার্কেটে কি ট্রেন্ড প্রচলিত
- কাস্টমারের কাছে উক্ত প্রোডাক্ট এর চাহিদা কেমন
- কাস্টমারের রুচি ও চাহিদা
- কোন বয়সের মানুষের মধ্যে উক্ত প্রোডাক্ট এর চাহিদা বেশি
- কম্পিটিটর কারা কারা
- মার্কেটে উক্ত প্রোডাক্ট কেমন কোয়ালিটির আছে
- উক্ত প্রোডাক্টের মার্কেটে গ্যাপ কোথায়
এই বিষয় গুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে পারলে মার্কেট সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি মার্কেটে থাকা প্রোডাক্টের গ্যাপ পূরণ করে মার্কেটিং করতে পারলেই কম্পিটিটরকে পেছনে ফেলা সম্ভব।
কোন নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সেল করা। সঠিকভাবে মার্কেট রিসার্চ করা হলে প্রোডাক্ট থেকে অল্প সময়ে সেল বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। যাইহোক, নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে আনার জন্য সাধারণত মার্কেট রিসার্চ ও কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস এই দুই ধরনের রিসার্চ কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্ল্যান তৈরি করা
প্ল্যান হচ্ছে কীভাবে প্রোডাক্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে সেল করা হবে তার রোডম্যাপ। নতুন প্রোডাক্ট আনার জন্য এটি হচ্ছে তৃতীয় ধাপ। এখানে প্রোডাক্ট আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কি কি করতে হবে তা নির্ধারণ করা। এটা অনেকটা ব্লুপ্রিন্ট বা স্কেচ হিসেবে কাজ করে।
ধরুন আপনি নতুন প্রোডাক্ট হিসেবে টাইলস বানাবেন। তো প্লানিং এর মধ্যে টাইলস বানানোর কাঁচামাল সংগ্রহ, উৎপাদন, সংরক্ষণ, মার্কেটিং, ডিস্ট্রিবিউশন ইত্যাদি বিষয় গুলো পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। বিশেষজ্ঞ মার্কেট রিসার্চার নতুন প্রোডাক্ট আনার সময় প্ল্যানিং এর মধ্যে প্রোডাক্ট এর দাম এবং কোন কোন মার্কেটিং পদ্ধতি ইউজ করা হবে সেগুলো উল্লেখ থাকে।
সঠিক ও কার্যকরী প্ল্যানিং থাকার কারণে প্রোডাকশন দ্রুত গতিতে হয়। পাশাপাশি প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার ইরর কমে যায়। যা উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি নতুন প্রোডাক্ট দ্রুত কাস্টমারের হাতে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
প্রোটোটাইপ বানানো
প্রোটোটাইপ হচ্ছে ফাইনাল প্রোডাক্ট তৈরি করার পূর্বে ডেমো প্রোডাক্ট তৈরি করা। এটি অনেকটা পুকুরের গভীরতা মেপে তারপর ঝাঁপ দেওয়ার মতো। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যখন আপনি পুকুরে গোসল করতে যান তখন কিন্তু হুট করে ঝাঁপ দেন না। আমরা উক্ত পুকুরের গভীরতা জানা না থাকলে একটু একটু করে পাড় থেকে নিচে নেমে কমফোর্টেবল গভীরতা পর্যন্ত গিয়ে তারপর গোসল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
একইভাবে প্রোটোটাইপ তৈরি করা হচ্ছে একবারে ঝুপ করে পুকুরে ঝাঁপ না দিয়ে একটু একটু করে নিচে নেমে গভীরতা পরিমাপ করার মতো। বর্তমান সময়ে আমরা যত সুপার কার বা ইলেকট্রিক ডিভাইস দেখি এগুলো মূলত মার্কেটে আনার আগে প্রোটোটাইপ তৈরি করে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া হয়।
প্রোটোটাইপ তৈরি করে যে যে বিষয় গুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা হয়-
- ডিজাইন ইরর
- ম্যাচিং কালার
- ফিচার প্লেসমেন্ট
- ফিচার ইরর
- গঠনগত ডিফেক্ট
- সাস্টেনিবিলিটি
ইত্যাদি বিষয় গুলো প্রোটোটাইপ পরিক্ষায় বিবেচনা করা হয়। সঠিকভাবে প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর তা MVP (Minimum Viable Product) তে পরিণত হয়। যাইহোক, কোন প্রোডাক্টের প্রোটোটাইপ তৈরি করার মাধ্যমে উক্ত প্রোডাক্টের সমস্যা খুঁজে বের করে তা সমাধানের পাশাপাশি ফাংশন ও ফিচার উন্নত করা হয়।
টেস্ট করা
নতুন কোন প্রোডাক্ট বাজারে সবার কেনার জন্য ওপেন করে দেওয়ার আগে টেস্ট করার কোন বিকল্প নেই। বড় বড় কোম্পানি তাদের নতুন কোন প্রোডাক্ট মার্কেটে আনার সকল দায়িত্ব R&D (Research and Development) ডিপার্টমেন্টের উপরে ছেড়ে দেয়। মার্কেট রিসার্চ থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট টেস্ট করে ফাইনাল করা পর্যন্ত পুরো বিষয় তারা দেখে থাকে।
সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে একটি ফেমাস বিষয় হচ্ছে বেটা ভার্শন রিলিজ করা। এই ইন্ডাস্ট্রিতে বেটা ভার্শনকে অনেকটা প্রোটোটাইপের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এখানে প্রথমে কোন সফটওয়্যার তৈরি করে তা কাস্টমার পর্যায়ে টেস্ট করার জন্য বেটা ভার্শন রিলিজ করা হয়। কাস্টমার সেই সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ইন্সটল করে টেস্ট করে দেখে সব ফিচার কাজ করছে কিনা।
পরবর্তীতে সফটওয়্যার কোম্পানিকে কি কি ফিচার কাজ করছে এবং কোন কোন যায়গায় আরও উন্নতি করতে হবে পাশাপাশি কোন ডিজাইন এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ইরর আছে কি না সে সম্পর্কে ফিডব্যাক দেয়। আপনি আপনার প্রোডাক্ট টেস্ট করার জন্য R&D ডিপার্টমেন্টের উপরে নির্ভর করতে পারেন অথবা নিজে থেকেও টেস্ট করতে পারবেন। মূলত প্রোডাক্ট টেস্ট করার সময় যে যে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় তা হচ্ছে-
- ফিচার গুলো কি কি
- ফিচার গুলো কাজ করছে কিনা
- সকল পরিস্থিতিতে কেমন পারফর্মেন্স দিচ্ছে
- আবহাওয়ার সাথে কোন ধরনের কনফ্লিক্ট করছে নাকি
- যে যে ফিচার দেওয়া হয়েছে তা কি মানুষের উপকারে আসছে নাকি
- ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট হলে বিল্ট কোয়ালিটি কেমন হচ্ছে
ইত্যাদি বিষয় গুলো প্রোডাক্ট টেস্ট করার সময় অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখতে হয়। এখানে যদি কোন সমস্যা থাকে বা নতুন কোন ফিচার আনতে হয় বা কিছু বাদ দিতে হয় তাহলে আবার প্রোটোটাইপ তৈরি করে টেস্ট করা যায়। এই ধাপ মূলত বড় আকারে ফাইনাল প্রোডাক্ট তৈরি করার পূর্বের ধাপ।
পণ্য তৈরি করা
পণ্য তৈরি করা নতুন পণ্য উৎপাদনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে কাজ করে। কারণ প্ল্যান করে পণ্য তৈরি না করলে কিন্তু প্ল্যান করার কোন সার্থকতা থাকল না। পণ্য তৈরি করার থাপকে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করে তারপর কাজ করতে হয় যেমন-
- কাঁচামাল সংগ্রহ
- কাঁচামাল ট্রান্সপোর্টেশন
- উৎপাদন (লেবার, মেশিন, বিদ্যুৎ)
- ম্যানেজমেন্ট
- স্টোরেজ, ইত্যাদি।
বিজনেসের ধরণ অনুযায়ী প্রোডাক্ট তৈরি করার প্রসেস আলাদা হয়ে থাকে। যে কারণে উৎপাদন প্রসেস আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে প্রধান বিষয় হচ্ছে প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর তা টেস্ট করে পণ্য বাজারজাত করার জন্য উৎপাদন শুরু করে দেওয়া উচিত।
বাজারে পণ্য চালু করা
নতুন পণ্য তৈরি করার পর বাজারে চালু করা লাস্ট স্টেপ হিসেবে ধরা হয়। এখানে কিছু বিষয় আছে যেখানে অনেক গুরুত্ব দিতে হয়। ধরুন আপনি প্রোডাক্ট তৈরি করলেন এবং মার্কেট হিসেবে আপনার প্রোডাক্ট বেস্ট। এই গুলো বিবেচনা করে আপনি প্রোডাক্ট মার্কেটে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আশানুরূপ সেল পেলেন না যা আপনার কনফিডেন্স ভেঙ্গে দিল।
এখানে কি তাহলে প্রোডাক্টের সমস্যা থাকার কারণে আপনার সেল আসলো না? বিষয় তা এরকম নাও হতে পারে। আসলে আপনি যখন নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে নিয়ে আসবেন তখন আপনার টার্গেট করা কাস্টমারকে উক্ত প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রপার মার্কেটিং চ্যানেল অনুসরণ করতে হবে।
শেষ কথা
বিজনেসে নতুন পণ্য উদ্ভাবন দীর্ঘ সময় মার্কেটে টিকে থাকতে সহায়তা করে। অনেক বিজনেসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা যে প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস শুরু করেছে তার পরিবর্তে পরবর্তীতে চালু করা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দিয়ে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে নতুন পণ্য উদ্ভাবনের ধাপ গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। যা স্মল বিজনেস থেকে শুরু করে কর্পোরেট বিজনেসের জন্য প্রযোজ্য।