ব্যাটে বলে না মিললে ছোট হোক বা বড় যে কোন ব্যবসা ব্যর্থ হতে পারে। তবে বিজনেস ক্যাপাবিলিটি ও ব্র্যান্ড প্রমিজের কারণে বড় বিজনেস খারাপ সময় দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে। তবে ছোট বা স্টার্ট-আপ বিজনেসের জন্য এটি অনেক কঠিন হয়ে পরে। একটি ছোট বিজনেস সাধারণত অনেক কারণেই ব্যর্থ হতে পারে। এখানে ছোট ব্যবসা ব্যর্থ হয় কেন সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
স্বল্প পুঁজি
পুঁজি হচ্ছে কোন বিজনেসের মেরুদণ্ড। আমরা যেমন মেরুদণ্ড ছাড়া চলাচলে অচল তেমনি পুঁজি ছাড়া বিজনেস ব্যর্থ হয়ে পরে। ছোট বিজনেস গুলোর ক্ষেত্রে মূলধনের পরিমাণ বড় বড় বিজনেসের থেকে এমনিতেই কম থাকে। যে কারণে ছোট বিজনেসে এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায় না।
সচরাচর দেখা যায় ছোট বিজনেস গুলো নির্দিষ্ট বা কম সংখ্যক পণ্য নিয়ে বিজনেস শুরু করে। অন্যদিকে লাভের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ার কারণে পুঁজির পরিমাণের গ্রোথ ধীর গতির হয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি বিজনেসের পরিধি বৃদ্ধি করতে হয় তাহলে আর্থিক সমস্যায় পরতে হয়। অন্যদিকে স্বল্প পুঁজি কারণে বিজনেস অপারেটিং খরচ ও রিসোর্স সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে স্ট্রাগল করতে হয়।
![অতিরিক্ত ব্যয়](https://onedbc.com/wp-content/uploads/2025/01/Why-Small-Businesses-Fail-2.webp)
অতিরিক্ত ব্যয়
আয় এবং ব্যয় বিজনেসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মূলত বিজনেস শুরু করি আয় করার জন্য। কিন্তু যখনই আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হয় তখন ধীরে ধীরে পুঁজি কমে যায়। একটা সময় দেখা যায় বিজনেস দেউলিয়া হয়ে যায়। অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে যে শুধু ছোট বিজনেসের ক্ষতি হয় এমন নয়। বরং বড় বড় বিজনেস গুলো অতিরিক্ত খরচের কারণে অনেক সময় বিজনেস পরিচালনা করতে স্ট্রাগল করে থাকে।
আমরা জানি ছোট বিজনেস গুলো প্রায় সময় পুঁজি ছাড়া অথবা স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করে। এখন যদি প্রোডাক্ট ডেভেলপ না করে ম্যানেজমেন্ট অথবা অন্যান্য বিষয়ে বেশি খরচ করা হয় তাহলে ব্যয় বেড়ে যাবে। অন্যদিকে প্রোডাক্ট ডেভেলপ ও হবে না। এখানে এক দিকে যেমন ব্যয় বেড়ে গেল অন্যদিকে প্রোডাক্ট থেকে আয় তেমন হচ্ছে না। যা আল্টিমেটলি বিজনেস স্বাভাবিকভাবে চলার ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করবে।
প্ল্যানিং এর অভাব
বিজনেস প্ল্যানিং হচ্ছে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়া। শুধু বিজনেস না সকল ক্ষেত্রেই প্ল্যান করে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। প্ল্যান করে কাজ করার সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে সব কিছু গোছানো থাকে। অর্থাৎ ধরুন আপনি একটি মোটরসাইকেল শোরুম দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনি হুট করে আপনার মনমতো কোন জায়গায় শোরুম দিয়ে দিলেন। কিন্তু এমন জায়গায় শোরুম দিয়েছেন যেখানে কোন কাস্টমার আসে না।
তবে আপনি একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে প্ল্যান করে যদি যে জায়গায় কাস্টমার পাবেন এরকম জায়গায় বিজনেস প্রতিষ্ঠা করেন তাহলে সফলতা পাবেন। যাইহোক, ছোট ব্যবসা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে সঠিক প্ল্যান না থাকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।
মার্কেট পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা
বর্তমান সময় হচ্ছে কম্পিটিটিভ মার্কেটের যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। এই কারণে বিজনেস শুরু করার পূর্বে কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। ধরুন আপনি এমন কোন প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস শুরু করলেন যার চাহিদা পরের বছর শেষ হয়ে যাবে। এটি আপনার বিজনেসের অদূরদর্শীতার পরিচয় বহন করবে।
ছোট বিজনেসে সফলতা পেতে হলে মার্কেট পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এই বিষয়ে মানসিক ও আর্থিক দুইভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে। তা না হলে যদি কোন কারণে মার্কেট পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে বিজনেস ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। যাইহোক, মার্কেট পরিবর্তন বোঝার অনেক উপায় রয়েছে।
বিজনেস মডেল না থাকা
বিজনেস মডেল হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে পরিচালিত হবে এবং অর্থ আয় করবে তাকে বোঝায়। প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড হিসেবে বিজনেস মডেল সফলতার পথ সহজ করে দেয়। বিশেষ করে যারা ছোট বিজনেস শুরু করছে তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। বিজনেস মডেল এই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে।
বিজনেস মডেল না থাকলে কাজ গুলো গোছানোভাবে করা যাবে না। যে কারণে প্রোডাক্ট সেল করা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও অন্যান্য বিষয়ে ঝামেলা তৈরি করবে। যা বিজনেস প্রতিষ্ঠা করার প্রধান যে উদ্দেশ্য তার সাথে সাংঘর্ষিক। আপনার বিজনেস মডেল তৈরি করার পূর্বে অবশ্যই একজন সফল বিজনেস ওনারের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এতে মডেল সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিষ্কার হবে এবং কীভাবে নিজের বিজনেস মডেল তৈরি করবেন সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন।
অসময়ে প্রোডাক্ট রিলিজ
প্রোডাক্ট হচ্ছে বিজনেসের প্রাণ। প্রোডাক্ট সেল করতে না পারলে সেখান থেকে কোন প্রকারের রেভিনিউ আসবে না। রেভিনিউ ছাড়া বিজনেস করার আসলে কোন মানেই হয় না। বিজনেস শুরু করার পূর্বে কোন ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা হবে তা নির্ধারণ করে নিতে হয়। ছোট বিজনেস শুরু করার জন্য এই ক্ষেত্রে তেমন ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে না। যে কারণে দেখা যায় মার্কেটে হয়ত উক্ত প্রোডাক্ট আছে। অথবা আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন তা হয়ত সিজনাল।
এই রকম আরো অনেক প্যারামিটার থাকে। এগুলোর মধ্যে প্রোডাক্ট রিলিজ করার বিষয়ে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ছোট বিজনেস গুলোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অসময়ে প্রোডাক্ট রিলিজ করে দেওয়া। অসময় বলতে এখানে প্রোডাক্ট রেডি না করেই পাবলিশ করে দেওয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ যদি সময়ের আগেই প্রোডাক্ট মার্কেটে চলে আসে এবং প্রোডাক্টে কোন ফল্ট থাকে তাহলে ব্রান্ডিং এবং বিক্রির সম্ভাবনা দুটোই নষ্ট হয়ে যাবে। এই জন্য নিজে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ফুল কনফিডেন্ট না হয়ে মার্কেটে রিলিজ করা যাবে না।
![ফান্ড রাইজিং সক্ষমতা না থাকা](https://onedbc.com/wp-content/uploads/2025/01/Why-Small-Businesses-Fail-3.webp)
ফান্ড রাইজিং সক্ষমতা না থাকা
বিজনেস শুরু করা থেকে শুরু করে পরিচালনা করার সময় আর্থিক দিকে সতর্ক নজর রাখতে হয়। বড় বড় বিজনেসের ক্ষেত্রে তারা ফান্ড সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে। কারণ তারা পরিচিত এবং তাদের ব্র্যান্ড ভালু বেশি। যে কারণে ইনভেস্টর তাদের ইনভেস্ট করার সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা বিজনেসকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
যে কারণে ছোট বিজনেসে শুরু থেকেই ফান্ড রাইজিং নিয়ে স্ট্রাগল করে থাকে। বেশিরভাগ ছোট বিজনেস পুঁজি ছাড়াই অথবা স্বল্প পুঁজি নিয়ে বিজনেস শুরু করে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্ট করার সময় ছোট বিজনেস গুলোকে অ্যাভয়েড করে থাকে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইনভেস্ট এর ক্ষেত্রেও ট্রাস্ট ইস্যু থাকে। যে কারণে ছোট বিজনেস বিপদে ফান্ড রাইজ করতে স্ট্রাগল করে। যা বিজনেসকে আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।
মার্কেটিং ভিশন না থাকা
নিজের পরিবার বাদে আমরা যাদের পছন্দ বা অপছন্দ করি তা মার্কেটিং দ্বারা প্রভাবিত। অর্থাৎ আমরা যে খাবার খাই এবং যে কাপড় পরি তা একজন মার্কেটার নির্ধারণ করে দেয়। মোটকথা আমরা সব সময় মার্কেটিং এর মধ্যে থাকে এবং এটি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি। যাইহোক, বিজনেস সফলতার জন্য অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি মার্কেটিং সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে না পারলে বিজনেস যে কোন সময় ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ একটি বিজনেস তখনি চলে যখন তার প্রোডাক্ট সেল হয় এবং রেভিনিউ আসে। কিন্তু মার্কেটিং না করলে উক্ত প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পরিচিতি পাবে না এবং কাস্টমার বেশ তৈরি হবে না। আর কাস্টমার না থাকলে সেল আসবে না। সেল না আসলে বিজনেস থেকে লাভ হবে না এবং বিজনেস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য বিফল হয়ে যাবে।
শেষ কথা
এখানে ছোট ব্যবসা ব্যর্থ হয় কেন এবং এর পেছনে কি কি বিষয় ভূমিকা রাখে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বড় বিজনেস গুলোর থেকে ছোট বিজনেস গুলো যেমন রেভিনিউ কম করে তেমনি এখানে স্ট্রাগল বেশি করতে হয়। এই কারণে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিজনেস ব্যর্থ হয়।