ব্যবসায় উন্নয়নের কৌশল কি কি?

ব্যবসায় উন্নয়ন করতে হলে কর্মীদের পাশাপাশি মালিকের বেশ কিছু করণীয় থাকে। উন্নয়ন ধরে রাখতে না পারলে একটা সময় বিজনেসে লস হয় যা সারভাইভ করতে না পারলে বিজনেস বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণে সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি সেই সফলতা ধরে রাখতে হবে। ব্যবসায় উন্নয়নের কৌশল অনুসরণ করে সহজেই এই কাজ করা যায়। আজকের লেখায় কি কি উপায়ে ব্যবসায় উন্নয়ন করা সম্ভব সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

বিজনেসে ফোকাসড থাকতে হবে

বিজনেস একটি কম্পিটিটিভ জায়গা। এখানে মিস্টেক বা ফোকাস নষ্ট হলে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়। ইংরেজিতে অনেক ফেমাস একটি উক্তি আছে “Rome wasn’t built in a day”। যা দ্বারা বোঝায় কোনো কাজে সফলতা পেতে গেলে গোল ঠিক রেখে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি নতুন বিজনেস শুরু করেন তাহলে কিন্তু প্রথম দিন থেকেই আয় করা শুরু হবে না। আপনার প্রোডাক্ট মার্কেটে প্রবেশের পর পপুলারিটি পাবে এবং সেল বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করবে তখন আপনার আয় বৃদ্ধি পাবে। 

কিন্তু আপনি যদি বিজনেস শুরু করেই লাখ লাখ টাকা আয় করতে চান তাহলে হতাশ হয়ে পরতে হবে। কারণ কোন নতুন বিজনেস এক দিনে সফলতা পায় না। এই জন্য সবসময় ধৈর্য ধরে সফলতার জন্য পরিশ্রম করে যেতে হবে। বিজনেসে ফোকাসড থাকা বলতে সাধারণত বিজনেসের প্রতি ধ্যান জ্ঞান দিয়ে দিয়ে পরিশ্রম করাকে বোঝায়। আপনি একটি বিজনেস শুরু করে যদি অন্য কোন কাজে বিজি হয়ে পরেন তাহলে কখনোই সেই বিজনেস সারভাইভ করতে পারবে না। 

বিজনেসে ফোকাসড থাকতে হবে

নতুন টেকনোলজি ট্রাই করতে হবে

প্রযুক্তি দুনিয়া উন্নয়নের কারণে সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। খেলাধুলা, শিক্ষা, প্রকৌশল, চিকিৎসা থেকে শুরু করে চাকরি ও বিজনেস সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। একজন বিজনেস ওনার হিসেবে সফলতা পেতে অথবা বিজনেসে সাকসেস পেতে হলে অবশ্যই প্রযুক্তি ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। কারণ- 

  • এতে বিজনেস অনলাইনে পরিচিতি পাবে
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা পাওয়া যায়
  • কিছু কিছু কাজ আছে যা অটোমেশন করা যায়
  • কাস্টমার সাপোর্ট হিসেবে চ্যাট বট ইউজ করা যায় 
  • ইনভেন্টরি সফটওয়্যার ইউজ করে ওয়্যারহাউজ ম্যানেজ করা যায়

এগুলো ছাড়াও প্রযুক্তির আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে। কম্পিটিটিভ ওয়ার্ল্ডে বিজনেস সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির সাথে মার্জ করে নেওয়া জরুরি। কারণ আপনি না করলেও আপনার কম্পিটিটর করে ফেলবে এবং তার কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে প্রযুক্তি আপনার সময় অনেক সেভ করবে যা বিজনেসের অন্যান্য দিকে মনোযোগ দিতে সহায়তা করবে। 

সৃজনশীল হতে হবে

বিজনেসে উন্নয়ন নির্ভর করে কৌশলের উপরে। আপনি যত কৌশলী হবেন আপনার বিজনেস তত দূর এগিয়ে যাবে। বিজনেস কনসালটেন্টদের মতে ওনারদের এমন হওয়া উচিত যে তারা সব জানে না। এতে সে নতুন নতুন আইডিয়ার গ্রহণ করতে পারবে। বিজনেস ভেদে কৌশল এবং উদ্যোগ আলাদা আলাদা হতে পারে তবে এর কোর বিষয় কিন্তু একই। অর্থাৎ মান্ধাতার আমলে যে পদ্ধতিতে বিজনেস পরিচালিত হয়ে আসছে তা কিন্তু এই যুগে খাপ খাবে না। 

তেমনি সময়ের সাথে সাথে বিজনেসে নতুনত্ব আনতে হবে। নতুন প্রোডাক্ট আনতে হবে এবং যে প্রোডাক্ট গুলো আছে সেগুলোর মান উন্নয়ন করতে হবে। মার্কেটে আপনার প্রোডাক্ট এর চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য যা করা উচিত সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। বিজনেসে ক্রিয়েটিভ হওয়ার বিষয়ে যে উদাহরণ সব থেকে বেশি কাজ করে তা হচ্ছে অ্যামাজন। 

শুরুর দিকে আমাজন ছোট পরিসরে একটি অনলাইন বুক সেলিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা ফার্মেসি, অ্যারো স্পেস, ক্লাউড হোস্টিং, ফুড মার্কেট সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিজনেসের প্রসার করেছে। তেমনি স্যামসাং নুডুলস কোম্পানি থেকে আজকে জাহাজ বানানো থেকে শুরু করে টেক দুনিয়ায় ডমিনেট করে যাচ্ছে। 

মার্কেটিং বৃদ্ধি করতে হবে

বিজনেস গ্রো করতে মার্কেটিং এর কোন বিকল্প নেই। মার্কেটিং ছাড়া কোন বিজনেস তার আশানুরূপ সাফল্য পেতে পারে না। কারণ আপনি যে প্রোডাক্ট সেল করছেন তা তার কাঙ্ক্ষিত কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে মার্কেটিং। বিজনেসে সাফল্য পেতে গেলে বিজনেসে মোট ইনভেস্টের একটি বড় অংশ মার্কেটিং এর জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। 

মার্কেটিং এর অনেক কৌশল আছে যা সেল বৃদ্ধি করতে কাজ করে থাকে। যেমন- 

  • প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা
  • নিউজ পেপার সহ মিডিয়ায় অ্যাড দেওয়া
  • ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ড করা
  • অনলাইনে কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ

ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করলে সেল বৃদ্ধি হয়। সাধারণত বিজনেসের ধরণ অনুযায়ী মার্কেটিং পদ্ধতি আলাদা আলাদা হতে পারে। কোন বিজনেসে কি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কাজ করবে তা সরাসরি বলা যায় না। তবে এই সেক্টরে অভিজ্ঞতা থাকলে স্ট্রাটেজি তৈরি করা সহজ হয়। সর্বোপরি স্ট্রাটেজি যত শক্তিশালী হয় সেল তত বেশি জেনারেট হয়। পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং হয় যা কাস্টমারের কাছে ট্রাস্ট তৈরি করে।  

কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে হবে

বিজনেসের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে এর ক্লাইন্ট। আপনি যদি আপনার ক্লাইন্ট এর মন জয় করতে পারেন এবং তাদের বেস্ট সার্ভিস দিতে পারেন তাহলে সেল এমনিতে বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে বেস্ট কাস্টমার সাপোর্ট দেওয়ার কারণে ওয়ার্ড অফ মাউথ এর কারণে আপনার বিজনেসের অটো মার্কেটিং হয়ে যাবে। 

এই ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার কাস্টমার যেন সব থেকে ভালো সার্ভিস পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। যাইহোক, কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেমন-

  • লাইভ চ্যাট
  • সাপোর্ট টিকিট
  • সরাসরি ফোন
  • টোল ফ্রি নাম্বার
  • হোয়াটসঅ্যাপ 
  • মেসেঞ্জার
  • ই-মেইল, ইত্যাদি। 

এই চ্যানেলগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার কাস্টমারের এক্সপেরিয়েন্স শুনতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের কমপ্লেইন গুলো বিচার বিশ্লেষণ করে যদি সমাধান করে দেন তাহলে আপনার বিজনেসের প্রতি তাদের ট্রাস্ট তৈরি হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি প্রযুক্তি ইউজ করে কাস্টমার সাপোর্ট আরো উন্নত ও দ্রুত করতে পারবেন। 

বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহে রাখতে হবে

বিজনেসে সফলতা আসে নিয়মিত তদারকি ও সসছ ব্যাবসায়িক হিসেব-নিকেশের মাধ্যমে। বিজনেস শুরু করার সময় থেকে যা যা ইনভেস্ট করা হয়েছে এবং কোথায় কত খরচ হয়েছে সব কিছুর হিসেব রাখতে হবে। আপনি একজন বিজনেস ম্যান হিসেবে যত বিজি থাকুন না কেন আপনাকে এই কাজ করতেই হবে। কারণ আপনি হিসেব না রাখলে বিজনেস কোন পথে যাবে এবং কোন কোন জায়গায় সমস্যা হচ্ছে তা বুঝতে পারবেন না। 

যে কারণে বিজনেস পরিচালনায় যে যে ফিনান্সিয়াল রেকর্ড সংগ্রহ করা দরকার তা সংগ্রহ করে ফিজিক্যাল ব্যাকআপ রাখতে হবে এবং পাশাপাশি অনলাইনে সেগুলো সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনলাইনে সিকিউর প্লেসে স্টোর করা থাকলে আপনি তা যে কোন জায়গা থেকে দেখতে ও তদারকি করতে পারবেন।  

অটোমেশন ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে

অটোমেশন ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে

অটোমেশন বিজনেসে গতি নিয়ে আসে। একটি কাজ করতে সাধারণভাবে যত সময় লাগবে অটোমেশন করে তা অর্ধেকে নামিয়ে আনা যাবে। অটোমেশন ইমপ্লিমেন্ট করার জন্য সবার প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে কোন ধরনের কাজ বারবার একই ভাবে করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেখতে হবে কোন কাজগুলোতে অনেক বেশি সময় লাগছে। বিজনেসে আপনি মূলত নিম্নে বর্ণিত বিষয়ে অটোমেশন করতে পারবেন, যেমন-

  • চ্যাট বট
  • ইনভয়েস তৈরি
  • কুরিয়ার ম্যানেজমেন্ট
  • ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট
  • ই-মেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন
  • কাস্টমার সাপোর্ট

উপরে বর্ণিত বিষয় গুলো বিজনেসে ইমপ্লিমেন্ট করা অনেক জরুরি। এটি ব্যবসায় উন্নয়নের কৌশলগুলোর মধ্যে অবশ্যই পালন করা উচিত। কারণ অটোমেশন কাজের গতি বৃদ্ধি করে প্রোডাকশন ও কাস্টমার স্যাটিসফেকশন বৃদ্ধি করে। 

শেষ কথা

বিজনেসে সফলতা পাওয়ার জন্য সবার আলাদা আলাদা স্ট্রাটেজি থাকে। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু কমন বিষয় রয়েছে যা সকলের অনুসরণ করতে হয়। উপরে বর্ণিত ব্যবসায় উন্নয়নের কৌশল মেনে চললে ছোট, মাঝারি বা বড় বিজনেস তাদের গতিশীল সফলতা ধরে রাখতে পারবে।