একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে আমাদের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গভীর থেকে গভীরে ভাবা উচিত। কারণ একটি শক্তিশালী পরিকল্পনা ছাড়া বিজনেস শুরু করলে তা থেকে প্রফিট আসার পরিবর্তে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নিচে কি কি পদক্ষেপ সঠিক ভাবে বিজনেস শুরু করতে সহায়তা করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিজনেস আইডিয়া
যে কোন কাজ শুরু করার আগে পরিকল্পনা তৈরি করে নেওয়া অনেক জরুরী। বলা হয়ে থাকে কাজে সফলতার অনেক কিছুই নির্ভর করে পরিকল্পনার উপরে। যাইহোক, যে কোন বিজনেস শুরু করার পূর্বে কি নিয়ে বিজনেস দার করাবো অর্থাৎ নিশ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। নিশ স্পেসিফিক না হলে কার্যকরী স্ট্রাটেজি তৈরি করা যাবে না।
বিজনেস আইডিয়া তৈরি করা ও প্রবলেম সল্ভিং করা একই বিষয়। মূলত বিজনেস আইডিয়ার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থাকে।
- নিশ
- কোন ধরনের অডিয়েন্সের জন্য তৈরি
- বিজনেস থেকে কোন কোন বয়সের মানুষ উপকৃত হবে
- কত বছর পর্যন্ত বিজনেস ভ্যালু থাকবে
- লোকাল মার্কেটে কম্পিটিটর কারা
- প্রফিট কতদিন পর শুরু হবে
- আর্থসামাজিক জীবনে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে কিনা
- আইনি ঝামেলা পোহাতে হবে কিনা
ইত্যাদি বিষয় গুলো একটি পারফেক্ট বিজনেস আইডিয়া তৈরি করতে সাহায্য করে।
![বিজনেস আইডিয়া](https://onedbc.com/wp-content/uploads/2025/01/new-business-2.webp)
মার্কেট রিসার্চ
মার্কেট রিসার্চ এমন একটি বিষয় যা বিজনেস শুরু করার পর তা চলবে কি চলবে না তা নির্দেশ করে। এখানে মার্কেট সম্পর্কে অনেক গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। মূলত কোন বিজনেস শুরু করার পূর্বে উক্ত বিজনেস মার্কেটে আসলে কি কি হতে পারে তার নাড়ি-নক্ষত্র বের করতে মার্কেট রিসার্চ কাজ করে। বিশেষ করে নতুন এবং ইউনিক প্রোডাক্ট মার্কেটে আনলে কি ধরনের রেস্পন্স পাওয়া যাবে তা রিসার্চ ডাটা থেকে ধারনা করা যায়।
মার্কেট রিসার্চ করার ক্ষেত্রে কম্পিটিটর, মার্কেট ট্রেন্ড, টার্গেটেড অডিয়েন্স ইত্যাদি খুঁজে বের করা হয়। এতে বোঝা যায় মার্কেটে এন্ট্রি নেওয়ার কোন ফাক-ফোকর রয়েছে কিনা। অন্যদিকে মার্কেট রিসার্চের মাধ্যমে কাস্টমার ডাটা সংরহ করা হয় যেখানে থাকে সম্ভাব্য কাস্টমারের বয়স, রুচি, মন-মানসিকতা ইত্যাদি। এই প্যারামিটার দিয়ে বিজনেস আইডিয়া বিচার করলে উক্ত বিজনেস শুরু করা ঠিক হবে কি হবে না এবং কি পরিমানে এবং কতদিন পর্যন্ত প্রফিত করা যাবে সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।
কার্যকরী প্ল্যান তৈরি
বিজনেস প্ল্যান হচ্ছে যখন নিশ সিলেক্ট করা হয়ে যাবে এবং মার্কেট রিসার্চ করে পসিটিভ সিগন্যাল পাওয়া যাবে তখন নেওয়া পদ্ধক্ষেপ। সকল কাজের শুরু হয় প্ল্যানিং করার মাধ্যমে। যদি প্ল্যান ঠিক না থাকে তাহলে কাজে সফলতা পাওয়া যায় না। তো কার্যকরী প্ল্যানের মধ্যে যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরী তা হচ্ছে-
- কীভাবে কাস্টমার বেস তৈরি করা যায়
- কীভাবে কাস্টমারকে কিনতে উৎসাহিত করা যায়
- এবং কোন ধরনের ইনোভেশন কম্পিটিটর থেকে আলাদা করবে
এই বিজনেস প্ল্যানের মধ্যে মার্কেট থেকে পাওয়া প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ডাটা থাকে। যা কাস্টমার সম্পর্কে অনেক গভীর ধারনা দেয়। পরবর্তীতে এই ধারনা কাজে লাগিয়ে যেমন পণ্য উদ্ভাবন করা হয় তেমনি পণ্যের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।
বিজনেস স্ট্রাকচার নির্বাচন
বিজনেস স্ট্রাকচার হচ্ছে আপনি বিজনেস পার্টনারশিপে করতে চাচ্ছেন না নিজে একাই করতে চাচ্ছেন। পাশাপাশি কর্পোরেশন হিসেবে বিজনেস শুরু করবেন না LLC হিসেবে শুরু করবেন তাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, বিজনেস স্ট্রাকচার কেমন হবে তা কয়েকটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে।
তবে বিজনেস নিস, টার্গেটেড অডিয়েন্স, বিজনেস লোকেশন ইত্যাদি প্যারামিটার বিজনেস স্ট্রাকচার কেমন হবে তার উপরে প্রভাব ফেলে। ছোট, মাঝারী ও বড় বিজনেসের স্ট্রাচকার আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
রেজিস্ট্রেশন
বিজনেস রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বিজনেসের জন্য একটি আইডেন্টি তৈরি করা। এর মধ্যে বিজনেসের নাম নির্বাচন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হয় যেন তা নিশের সাথে রিলেভেন্ট হয়। অন্যদিকে রিলেভেন্ট নাম থাকলে কাস্টমার আইডিয়া করতে পারে বিজনেসের কাজ এবং উদ্দেশ্য কি। বিজনেস রেজিস্ট্রেশন বলতে সাধারণত যা বোঝায় তা হচ্ছে-
- নাম নির্বাচন
- একই নামে অন্য কোন বিজনেস নেম রেজিস্ট্রেশন করা আছে নাকি তা চেক করা
- বিজনেস নেম রেজিস্ট্রেশন করা
- প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নেওয়া
- পারমিট ডকুমেন্ট তৈরি করা
- ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন করা
এগুলো মূলত কোম্পানি বা বিজনেস রেজিস্ট্রেশন করতে প্রয়োজন হয়। একটি রেজিস্ট্রারড বিজনেস সম্পর্কে কাস্টমারদের মধ্যে ট্রাষ্ট কাজ করে যা সেল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
আর্থিক দিক বিবেচনা
একটি বিজনেস প্রতিষ্ঠা করার জন্য মোটামুটি পর্যায়ের ফান্ড প্রয়োজন হয়। বিজনেস সাইজ যত বড় হবে তাতে আর্থিক সাপোর্ট তত বেশি প্রয়োজন পড়বে। যে কারণে বিজনেস পরিচালনা করার জন্য প্ল্যানিং এর মধ্যে আর্থিক সাপোর্ট ইনক্লুড করা জরুরী।
সাধারণত বিজনেস প্রতিষ্ঠায় কয়েক ধরনের ফিনান্স সোর্স থাকতে পারে। যেমন-
- নিজের সেভিংস
- ধার করা অর্থ
- ব্যাংক লোন
- ইনভেস্টর
- পার্টনার
বিজনেসের ধরনের উপরে কোন সোর্সের উপর ভরসা করা উচিত তা নির্ভর করে। নতুন বিজনেস শুরু করার পূর্বে বাকি বিষয় গুলো যেভাবে গুরুত্ব দিতে হয় তেমনি এই বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ বিজনেস শুরু করে মাঝ পথে যদি ফান্ড শেষ হয় তাহলে কিন্তু বিজনেস চালু রাখা অনেক কঠিন হয়ে পরে।
বিজনেস লোকেশন
বিজনেস রান করার জন্য ফিজিক্যাল এবং ভার্চুয়াল দুই ধরনের লোকেশন নেওয়া যায়। বর্তমানে বেশীরভাগ ই-কমার্স বিজনেস ভার্চুয়াল লোকেশনে পরিচালনা করা হয়। অন্যদিকে অনেকের ওয়্যারহাউজ থাকে তবে প্রোডাক্ট ডিসপ্লে ও সেল করা সব কিছুই অনলাইনে করা হয়। যেখানে ক্রেতা সরাসরি দোকানে এসে কিনে নিয়ে যায় না। অন্যদিকে ফিজিক্যাল লোকেশনে বিজনেস শুরু করার বেশ কিছু সুবিধা আছে তবে ভার্চুয়াল লোকেশনের ভিত্তিতে কিছু অসুবিধা আছে।
অবকাঠামো তৈরি
বিজনেসের জন্য অবকাঠামো তৈরির পার্ট আসে তখন যখন উপরে বর্ণিত সবকিছু কমপ্লিট হয়ে যায়। বিজনেস আইডিয়া তৈরি ও ফান্ড সংগ্রহ করার পর বিজনেস পরিচালনা করার জন্য একটি স্থান প্রয়োজন পরে। এবং সেই স্থানে অফিস তৈরি করে বিজনেসের বাকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
অবকাঠামো তৈরির সময় যে যে বিষয় বিবেচনা করা উচিত-
- বিজনেসের ভিশন অনুযায়ী অফিস স্পেস নেওয়া
- অফিস স্পেস প্রয়োজন না পরলে অযথা অফিস নিয়ে খরচ না বাড়ানো
- ১০ জনের জন্য ১২ জনের অফিস স্পেস ঠিক আছে কিন্তু ২০ জনের জন্য না নেওয়া ভালো
![টিম তৈরি করা](https://onedbc.com/wp-content/uploads/2025/01/new-business-3.webp)
টিম তৈরি করা
ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি সৎ ও যোগ্য টিমের কোন বিকল্প নেই। বিজনেস কন্সিডারেশনের মধ্যে এই বিষয়ে অনেক বেশি সক্রিয় থাকা জরুরী। বিজনেস পরিচালনায় টিম একটি স্বত্বা হিসেবে কাজ করে। টিমের মধ্যে সবাই আলাদা আলাদা কাজ করলেও তাদের উদ্দেশ্য বিজনেস গ্রো তে কাজ করে। অর্থাৎ টিম আলাদাভাবে কাজ করলেও তাদের ইফোর্ট বা কাজের সমষ্টি বিজনেস পরিচালনায় সহায়তা করে।
মার্কেটিং বা ব্যান্ডিং
নতুন বিজনেস শুরু করার সব থেকে লাস্ট স্টেজে রয়েছে মার্কেটিং বা ব্রান্ডিং। এখানে বিজনেসে সম্ভাব্য কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো হয়। গতানুগতিক মার্কেটিং বা ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ইউজ করে বিজনেসের গুরুত্বপূর্ণ দিক কাস্টমারকে বোঝানো হয়। মার্কেটিং এ সব থেকে বেশি যে কাজ হয় তা হচ্ছে কাস্টমারের কাছে প্রোডাক্ট সম্পর্কে চাহিদা তৈরি করা। এবং তাদেরকে এটা বোঝানো যে এই প্রোডাক্ট না কিনে অনেক কিছু মিস হচ্ছে এবং তিনি জীবন যুদ্ধে পিছিয়ে পরছেন। সর্বোপরি মার্কেটিং বা ব্যান্ডিং বলতে বিভিন্ন পদ্ধতি ইউজ করে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে বিজনেসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তৈরি করা।
শেষ কথা
বেশীরভাগ মানুষ নতুন বিজনেস শুরু করার সময় এক্সসাইট্মেন্টে ভুল করে বসে। যে কোন বিজনেস শুরু করার আগে কিছু অবশ্য পালনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এখানে নতুন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কি কি কাজ করা উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।